গাজা উপত্যকার এক-চতুর্থাংশ বাসিন্দা (প্রায় ৫ লাখ ৭৬ হাজার) দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র একধাপ দূরে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ)-এর কোঅর্ডিনেশন ডিরেক্টর রমেশ রাজাসিংহাম বলেছেন, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে এবং গাজার দক্ষিণে জনাকীর্ণ এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর যদি এমনটা হয়, তাহলে মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কাজ করা খুব কমই সম্ভব হবে।’’
নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেন, ‘‘গাজার উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয় শিশুর মধ্যে এক শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার এবং ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডের ২৩ লাখ মানুষই কার্যত বেঁচে থাকার জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপর্যাপ্ত’ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।’’
রাজাসিংহাম আরও বলেন, ‘‘জাতিসংঘ এবং সাহায্য গোষ্ঠীগুলো গাজায় ন্যূনতম সহায়তা সরবরাহ পেতেও অপ্রতিরোধ্য বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।’’
এর মধ্যে ক্রসিং বন্ধ, চলাচল এবং যোগাযোগের ওপর বিধিনিষেধ, কঠোর পরীক্ষা পদ্ধতি, অস্থিতিশীলতা, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের মতো বিষয় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইসরায়েল গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জোনাথন মিলার।
তার দাবি, ‘‘সাহায্যের পরিমাণ এবং তা বিতরণের গতির বিষয়ে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাগুলো আসলে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।’’
মিলার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘‘ইসরায়েল তার নীতিতে স্পষ্ট। এর একেবারেই কোনও সীমা নেই এবং আমি আবারও বলছি, গাজার বেসামরিক জনগণের কাছে কী পরিমাণ মানবিক সাহায্য পাঠানো যেতে পারে তার কোনও সীমা নেই।’’
ইসরায়েলকে আরও কিছু করতে হবে
এদিকে মিত্র ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের জন্য সীমান্ত ক্রসিং খোলা রাখতে ও আরও ক্রসিং খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূত রবার্ট উড।
তিনি বলেন, ‘‘সহজ কথায়, ইসরায়েলকে আরও কিছু করতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সাহায্য নিরাপদে যেন যেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছি।’’
ডব্লিউএফপির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কার্ল স্কাউ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘‘যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় তাহলে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তার কার্যক্রম দ্রুত সম্প্রসারণ করতে এবং বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।’’
কার্ল স্কাউ বলেন, ‘‘গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ আনতে না পারা ও স্থলভাগে কর্মীদের কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।’’
ইসরায়েলের দাবি, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে ১,২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। অপরদিকে গাজায় ইসরায়েলের বিমান ও স্থল অভিযানে প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গায়ানার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন রড্রিগেস-বারকেট ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বলেছেন, ‘‘যুদ্ধে নাম দিয়ে গাজার জনসংখ্যার বিরুদ্ধে যে হামলা চলছে গায়ানা তাদের নিন্দা করে।’’
জাতিসংঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত অমর বেন্দজামা নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘‘গাজায় ইসরায়েলের অভিযান ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের জন্য একটি সম্মিলিত শাস্তি। আমাদের নীরবতা ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা এবং ক্ষুধার্ত করার লাইসেন্স দেয়।’’